কেন সয়েল টেস্ট করা জরুরি?
কেন সয়েল টেস্ট করা জরুরি?
পুষ্টি ব্যবস্থাপনার উন্নতি: সয়েল টেস্টের মাধ্যমে মাটিতে কী কী পুষ্টি উপাদান (যেমন: নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার এবং অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট) কী পরিমাণে আছে তা জানা যায়। এর ফলে কৃষকরা ফসলের নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সার প্রয়োগ করতে পারেন, যা সারের অপচয় কমায় এবং উৎপাদন খরচ বাঁচায়।
মাটির pH স্তর নির্ধারণ: মাটির pH বা অম্লতা/ক্ষারত্ব ফসলের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সয়েল টেস্টের মাধ্যমে pH স্তর জেনে প্রয়োজনীয় চুনাপাথর (lime) বা অন্যান্য সংশোধনী প্রয়োগ করে মাটির pH সঠিক মাত্রায় আনা যায়, যা পুষ্টি উপাদানের উপলব্ধতা বাড়ায়।
ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি: মাটির সঠিক পুষ্টি ও pH স্তর নিশ্চিত করার মাধ্যমে ফসল healthier হয়, ফলন বাড়ে এবং রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশ সুরক্ষা: অতিরিক্ত সার প্রয়োগ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যা ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ এবং মাটির অবক্ষয় ঘটায়। সয়েল টেস্টের মাধ্যমে সারের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করে পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদী মাটি ব্যবস্থাপনা: নিয়মিত সয়েল টেস্টের মাধ্যমে মাটির অবস্থার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা দীর্ঘমেয়াদী মাটি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।
সয়েল টেস্টে কী কী বিষয় পরীক্ষা করা হয়?
সয়েল টেস্টে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পরীক্ষা করা হয়:
পুষ্টি উপাদান: নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), পটাশিয়াম (K), ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), সালফার (S), বোরন (B), জিঙ্ক (Zn), ম্যাঙ্গানিজ (Mn), লোহা (Fe) ইত্যাদি।
pH স্তর: মাটি কতটা অম্লীয় বা ক্ষারীয়।
জৈব পদার্থ (Organic Matter): মাটির উর্বরতা, পানি ধারণ ক্ষমতা এবং কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লবণাক্ততা (Salinity): মাটির অতিরিক্ত লবণাক্ততা ফসলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মাটির গঠন ও বুনট (Texture and Structure): মাটি বালুময়, দোআঁশ বা এঁটেল কিনা, যা পানি নিষ্কাশন এবং বাতাস চলাচলে প্রভাব ফেলে।
ক্যাশন এক্সচেঞ্জ ক্যাপাসিটি (CEC): মাটি কতটা পুষ্টি উপাদান ধরে রাখতে পারে তার পরিমাপ।
কীভাবে সয়েল টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করবেন?
সঠিক নমুনা সংগ্রহ সয়েল টেস্টের ফলাফলের নির্ভুলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নমুনা সংগ্রহের স্থান নির্ধারণ: আপনার ক্ষেতের বা বাগানের যে অংশগুলোর মাটি একই ধরনের বলে মনে হয় (যেমন: একই ফসল ফলানো হয়, একই ধরনের ঢাল বা রঙের মাটি), সেগুলোকে আলাদা আলাদা নমুনা এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করুন।
উপকরণ: একটি পরিষ্কার কোদাল, বোরিং পাইপ (soil auger) বা মাটি কাটার জন্য একটি প্রোব, একটি পরিষ্কার প্লাস্টিকের বালতি এবং নমুনা রাখার জন্য পরিষ্কার প্লাস্টিকের ব্যাগ।
নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি:
প্রতিটি চিহ্নিত এলাকা থেকে অন্তত ১৫-২০টি ছোট ছোট উপ-নমুনা (sub-sample) সংগ্রহ করুন।
যেখানে সার বা চুনাপাথর ফেলা হয়েছে, পুরনো বেড়া, রাস্তার ধার, গাছের কাছাকাছি বা অতিরিক্ত আর্দ্র এলাকা থেকে নমুনা নেওয়া এড়িয়ে চলুন।
প্রথমে মাটির উপরের স্তরের আবর্জনা এবং গাছপালা সরিয়ে ফেলুন।
কোদাল বা প্রোব ব্যবহার করে মাটি থেকে ৬-৮ ইঞ্চি গভীর থেকে (সাধারণত ফসলের শিকড়ের গভীরতা পর্যন্ত) V-আকৃতির এক টুকরা মাটি তুলুন।
এই ছোট ছোট উপ-নমুনাগুলো একটি পরিষ্কার প্লাস্টিকের বালতিতে রাখুন।
সব উপ-নমুনাগুলো বালতিতে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি যৌগিক নমুনা (composite sample) তৈরি করুন।
এই যৌগিক নমুনা থেকে প্রায় ৫০০ গ্রাম (প্রায় ২ কাপ) মাটি একটি পরিষ্কার প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিন।
নমুনার লেবেল: ব্যাগের উপর সুস্পষ্টভাবে আপনার নাম, ঠিকানা, নমুনা এলাকার নাম বা নম্বর, এবং নমুনা সংগ্রহের তারিখ লিখে দিন।
ল্যাবে পাঠানো: সংগৃহীত নমুনা যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ কৃষি গবেষণাগারে বা বেসরকারি সয়েল টেস্টিং ল্যাবে পাঠান।
Comments
Post a Comment
ধন্যবাদ পান্তা ভাতের ক্লাবের সাথে থাকার জন্য।
জীবনের নানা দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা, গল্প, এবং তথ্যবহুল নিবন্ধ পড়তে আমাদের ব্লগ দেখুন.
বিস্তারিত জানতে।
https://Pantabhaterclub.blogspot.com
Panta Bhater Club 👈 Facebook