স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মূল কাজ ও দায়িত্ব:
একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের মূল কাজগুলো নিম্নরূপ:
কাঠামোগত ডিজাইন (Structural Design):
একটি কাঠামোর আকার, আকৃতি এবং উপাদান (যেমন: কংক্রিট, ইস্পাত, কাঠ, ইট) নির্বাচন ও ডিজাইন করা।
ভবন বা অন্যান্য কাঠামোর ভিতরের কাঠামো (যেমন: বিম, কলাম, স্ল্যাব, ভিত্তি) ডিজাইন করা, যাতে তা বিভিন্ন ধরনের লোড (স্থায়ী লোড, অস্থায়ী লোড, বাতাস, ভূমিকম্প ইত্যাদি) সহ্য করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট নির্মাণ কোড (building codes) এবং মানদণ্ড (standards) অনুসরণ করে ডিজাইন তৈরি করা।
কাঠামোগত বিশ্লেষণ (Structural Analysis):
বিভিন্ন ধরনের লোড (যেমন: ডেড লোড, লাইভ লোড, উইন্ড লোড, সিসমিক লোড) একটি কাঠামোর উপর কী প্রভাব ফেলবে তা গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করা।
কাঠামোর প্রতিটি উপাদানের (কলাম, বিম, স্ল্যাব ইত্যাদি) স্ট্রেস, স্ট্রেন এবং ডিফ্লেকশন (বিকৃতি) গণনা করা।
আধুনিক সফটওয়্যার (যেমন: ETABS, SAP2000, STAAD.Pro, AutoCAD, Revit) ব্যবহার করে কাঠামোগত মডেলিং এবং সিমুলেশন করা।
উপকরণ নির্বাচন (Material Selection):
প্রকল্পের প্রয়োজন অনুসারে সঠিক নির্মাণ উপকরণ (যেমন: রড, সিমেন্ট, বালি, পাথর) নির্বাচন করা এবং তাদের গুণগত মান নিশ্চিত করা।
উপকরণের শক্তি, স্থায়িত্ব এবং ব্যয়-কার্যকারিতা বিবেচনা করা।
নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ (Ensuring Safety & Stability):
ডিজাইন করা কাঠামোটি যেন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ভূমিকম্প, ঝড়) বা মানবসৃষ্ট কারণে ধসে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা।
ভবনের দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা এবং ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা বজায় রাখা।
নির্মাণ তত্ত্বাবধান (Construction Supervision):
ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ কাজ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত নির্মাণ সাইট পরিদর্শন করা।
নির্মাণ প্রক্রিয়ার সময় উদ্ভূত কোনো কাঠামোগত সমস্যা চিহ্নিত করা এবং তার সমাধান প্রদান করা।
নির্মাণ চলাকালীন গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ (Quality Control) নিশ্চিত করা।
রিপোর্ট ও ডকুমেন্টেশন (Reporting & Documentation):
বিস্তারিত কাঠামোগত অঙ্কন (structural drawings), হিসাব (calculations) এবং রিপোর্ট তৈরি করা।
কর্তৃপক্ষ এবং ক্লায়েন্টের কাছে প্রযুক্তিগত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা।
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যবহৃত কিছু ধারণা:
লোড (Loads): কাঠামোর উপর আরোপিত চাপ বা ওজন। যেমন:
ডেড লোড (Dead Load): কাঠামোর নিজস্ব ওজন (কলাম, বিম, স্ল্যাব, দেয়াল)।
লাইভ লোড (Live Load): আসবাবপত্র, মানুষ বা অস্থায়ী বস্তুর ওজন।
উইন্ড লোড (Wind Load): বাতাসের চাপ।
সিসমিক লোড (Seismic Load): ভূমিকম্পের প্রভাব।
স্ট্রেস ও স্ট্রেন (Stress & Strain): কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ চাপ এবং বিকৃতি।
ফ্যাক্টর অব সেফটি (Factor of Safety): ডিজাইনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মার্জিন যোগ করা হয় যাতে কাঠামোটি প্রত্যাশিত লোডের চেয়ে বেশি লোডও সহ্য করতে পারে।
নির্মাণ কোড (Building Codes): কাঠামো ডিজাইন ও নির্মাণের জন্য নির্ধারিত নিয়মাবলী ও মানদণ্ড (যেমন: বিএনবিসি - বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড)।
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের ক্ষেত্র:
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেন, যেমন:
ভবন নির্মাণ: আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প ভবনের ডিজাইন ও বিশ্লেষণ।
সেতু নির্মাণ: ছোট কালভার্ট থেকে শুরু করে বড় সেতু ডিজাইন।
টাওয়ার ডিজাইন: মোবাইল টাওয়ার, বিদ্যুৎ টাওয়ার ইত্যাদি।
শিল্প স্থাপনা: ফ্যাক্টরি, ওয়ারহাউস, চিমনি ইত্যাদি।
ভূমিকম্প প্রকৌশল (Earthquake Engineering): ভূমিকম্প-প্রতিরোধী কাঠামোর ডিজাইন।
রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন (Maintenance & Rehabilitation): বিদ্যমান কাঠামোর পরিদর্শন, মেরামত এবং শক্তিশালীকরণ।
Comments
Post a Comment
ধন্যবাদ পান্তা ভাতের ক্লাবের সাথে থাকার জন্য।
জীবনের নানা দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা, গল্প, এবং তথ্যবহুল নিবন্ধ পড়তে আমাদের ব্লগ দেখুন.
বিস্তারিত জানতে।
https://Pantabhaterclub.blogspot.com
Panta Bhater Club 👈 Facebook