কেন পাইলিং করা হয়?
কেন পাইলিং করা হয়?
পাইলিং করার মূল উদ্দেশ্য হলো স্থাপনার স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি নিম্নলিখিত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
ভার বহন: পাইলিং ভবনের সম্পূর্ণ ভার বহন করে এবং এই ভার মাটির গভীরে অবস্থিত শক্তিশালী স্তরে পৌঁছে দেয়, যেখানে মাটি বেশি ভারবহন ক্ষমতা সম্পন্ন।
দুর্বল মাটির সমাধান: যদি কোনো স্থানের মাটির গঠন দুর্বল হয় বা পর্যাপ্ত ভারবহন ক্ষমতা না থাকে, তাহলে সাধারণ ফাউন্ডেশন সেই ভার নিতে পারে না। এক্ষেত্রে পাইলিং ব্যবহার করে দুর্বল মাটির সমস্যা সমাধান করা হয়।
মাটি ক্ষয় রোধ: ভবনের চাপে মাটি সরে যাওয়া বা ক্ষয় হয়ে যাওয়া রোধ করতে পাইলিং সাহায্য করে।
ঘূর্ণন ও তীর্যক বল প্রতিরোধ: ভবন দ্বারা সৃষ্ট ঘূর্ণন মোমেন্ট (twisting moment) এবং তীর্যক বল (lateral forces) প্রতিরোধ করতে পাইলিং কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বালি মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি: অনেক সময় বালি দিয়ে ভরাট করা জমিতে পাইলিং করা হলে, এই বালি মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পানি সংলগ্ন কাঠামো: ব্রিজ, কালভার্ট, ডক, পায়ার এবং অন্যান্য মেরিন কাঠামো (পানি সংলগ্ন স্থাপনা) তৈরির ক্ষেত্রে পাইলিং অপরিহার্য।
পাইলিং এর প্রকারভেদ
বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরনের পাইলিং প্রচলিত আছে:
কাস্ট-ইন-সিটু পাইল (Cast-in-Situ Pile):
এই পদ্ধতিতে পাইলিং সরাসরি সাইটেই তৈরি ও স্থাপন করা হয়।
প্রথমে নকশা অনুযায়ী গর্ত (বোরিং) করা হয়।
তারপর লোহার খাঁচা (রিইনফোর্সমেন্ট) সেই গর্তে ঢুকানো হয়।
সবশেষে গর্তটি কংক্রিট দিয়ে ঢালাই করে পাইল তৈরি করা হয়।
এর আকৃতি সাধারণত গোলাকার হয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ বহুতল ভবনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
প্রি-কাস্ট পাইল (Pre-Cast Pile):
এই ধরনের পাইল আগে থেকেই অন্য একটি সুবিধাজনক স্থানে (সাধারণত কারখানায়) ঢালাই করে তৈরি করা হয়।
তৈরি হওয়ার পর এগুলো নির্মাণস্থলে নিয়ে আসা হয়।
এরপর আধুনিক মেশিনের সাহায্যে বা হাতুড়ি পেটা করে (ড্রাইভিং করে) মাটির গভীরে স্থাপন করা হয়।
এর আকৃতি গোলাকার বা বর্গাকার হতে পারে।
এছাড়াও, আরও কিছু বিশেষ ধরনের পাইলিং রয়েছে, যেমন:
স্যান্ড পাইল (Sand Pile): তুলনামূলকভাবে নতুন ধারণা। কম তলা বিশিষ্ট স্থাপনা, যেখানে মাটির ভারবহন ক্ষমতা কম, সেখানে মাটির ক্ষমতা বাড়াতে এটি কার্যকর।
শোর পাইল (Shore Pile): বেসমেন্টযুক্ত স্থাপনা বা যেখানে মাটি কাটার প্রয়োজন হয়, সেখানে পাশের মাটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং মাটির পার্শ্বচাপ প্রতিরোধ করার জন্য শোর পাইল ব্যবহার করা হয়। এটি প্রি-কাস্ট বা কাস্ট-ইন-সিটু উভয়ই হতে পারে।
টিম্বার পাইল (Timber Pile): কাঠের তৈরি পাইল, যা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
ইস্পাতের পাইল (Steel Pile): অত্যন্ত শক্তিশালী এবং শক্ত মাটি বা পাথরের স্তর ভেদ করে চালিত করা যায়। ভারী ভবন বা কঠিন মাটির জন্য ব্যবহার করা হয়।
পাইলিং কাজের পদ্ধতি (সাধারণত কাস্ট-ইন-সিটু পাইলের ক্ষেত্রে)
কাস্ট-ইন-সিটু পাইলিং এর জন্য সাধারণত নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:
সাইট প্রস্তুতি ও লেআউট: প্রথমে নির্মাণস্থল প্রস্তুত করা হয় এবং সয়েল টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী পাইলের অবস্থান চিহ্নিত করে লেআউট দেওয়া হয়।
বোরিং (গর্ত খনন): পাইলের ব্যাস ও গভীরতা অনুযায়ী বোরিং মেশিন দিয়ে মাটির গভীরে গর্ত করা হয়। মাটির ধরনের উপর নির্ভর করে ড্রাই বোরিং বা ওয়েট বোরিং (বেনটোনাইট স্লারি ব্যবহার করে) করা হয়।
রিইনফোর্সমেন্ট স্থাপন (লোহার খাঁচা বসানো): ডিজাইন অনুযায়ী তৈরি করা লোহার রডের খাঁচা বোরিং করা গর্তের মধ্যে স্থাপন করা হয়। রডগুলোকে কভার ব্লকের মাধ্যমে কংক্রিট থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখা হয়।
কংক্রিট ঢালাই (কাস্টিং): ট্রিমি পাইপ ব্যবহার করে গর্তের মধ্যে কংক্রিট ঢালাই করা হয়। ট্রিমি পাইপ ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলো কংক্রিট ঢালার সময় তা যেন মাটির সাথে মিশে না যায় এবং সঠিকভাবে গভীরে পৌঁছাতে পারে। ঢালাই করার সময় স্লাম্প ভ্যালু (কংক্রিটের কাজের ক্ষমতা) এবং কংক্রিটের গুণগত মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
কাট-অফ (Cut-off): পাইলের উপরের অতিরিক্ত অংশ (যেখানে কংক্রিট দুর্বল হতে পারে) নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়।
পাইল ক্যাপ তৈরি: সব পাইল শেষ হওয়ার পর, প্রতিটি পাইলের উপরে পাইল ক্যাপ তৈরি করা হয়। এই পাইল ক্যাপ কলামের লোডকে পাইলের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ করে।
পাইলিং কাজের সময় বিবেচ্য বিষয় ও সতর্কতা
সয়েল টেস্ট রিপোর্ট: পাইলিং এর ডিজাইন ও প্রকারভেদ সম্পূর্ণভাবে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর নির্ভর করে। তাই সঠিক সয়েল টেস্ট অত্যাবশ্যক।
স্ট্রাকচারাল ডিজাইন: অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করানো উচিত, যেখানে মাটির ধরন, ভবনের ওজন এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা হয়।
যন্ত্রপাতি: সঠিক ও আধুনিক পাইলিং যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ: কংক্রিট, রড এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মান নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
সুপারভিশন: পাইলিং কাজটি একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে করা উচিত যাতে কাজের মান বজায় থাকে এবং কোনো ত্রুটি না হয়।
Comments
Post a Comment
ধন্যবাদ পান্তা ভাতের ক্লাবের সাথে থাকার জন্য।
জীবনের নানা দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা, গল্প, এবং তথ্যবহুল নিবন্ধ পড়তে আমাদের ব্লগ দেখুন.
বিস্তারিত জানতে।
https://Pantabhaterclub.blogspot.com
Panta Bhater Club 👈 Facebook